নাগরিক ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতে নির্ধারিত দিনেই আজাদি মার্চ শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন রক্ষণশীল ইসলামপন্থি দল জমিয়াত উলেমা-ই ইসলামের প্রধান মাওলানা ফজলুর রেহমান। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ইমরান খানের সরকার এই আন্দোলন থামাতে নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এতে শুধু কলোহ বাড়বেই বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। লারকানায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে মাওলানা ফজল বলেন, জমিয়াত উলেমা-ই ইসলামের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে আজাদি মার্চকে দমিয়ে রাখা যাবে না। সরকারের সঙ্গে কোনো ধরণের আপোষেও তিনি যাবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সাংবাদিকদের মাওলানা ফজল বলেন, সরকার আমাদের থামাতে পেট্রোল পাম্প বন্ধ করে দিয়েছে। যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
ফজলুর রেহমান আরো দাবি করেন, ইমরান খান সরকারের পররাষ্ট্রনীতির জন্য পাকিস্তান সমগ্র বিশ্বে একা ও বন্ধুহীন হয়ে পরেছে। এই সরকার এক বছরে যে দুর্নীতি করেছে তা পূর্বেকার সকল সরকারের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এসময় সরকারকে কঠিন ভাষায় হুঁশিয়ারি দেন মাওলানা ফজল। বলেন, আজাদি মার্চে আত্মঘাতি বোমা হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি আজাদি মার্চের কোনো কর্মীর কিছু হয় তাহলে তার জন্য পুরোপুরি দায়ি থাকবে সরকার।
এর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আজাদি মার্চে জঙ্গি গোষ্ঠিগুলো আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে পারে। এতে বলা হয়েছে, জমিয়াতের নেতারা হবে ওই হামলার টার্গেট। ফলে তারা বড় ধরণের ঝুঁকির মধ্যে পরবেন বলেও সাবধান করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। জমিয়াত নেতা ছাড়াও বিরোধী দলীয় নেতাদের ওপরও এ হামলা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। ২৭ অক্টোবর থেকে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে দেশের সবপ্রান্ত থেকে রওনা দেবে আজাদি মার্চের সমর্থকরা। ৩১ অক্টোবর একসঙ্গে ইসলামাবাদে প্রবেশ করবে সবাই।
ওদিকে ‘আজাদি মার্চ’ কর্মসূচি নিয়ে মাওলানা ফজলের কড়া সমালোচনা করেছেন পাক বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী গোলাম সারওয়ার। তিনি বলেছেন, প্রতিবাদ করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু আমরা রাজধানী ইসলামাবাদে কোনো সশস্ত্র গ্রুপকে অনুমোদন দেবো না। তিনি আরো বলেন, বিরোধীদের প্রস্তাবিত অবস্থান ধর্মঘট কাশ্মীর ইস্যুকে পশ্চাতে ফেলে দেবে। এতে কাশ্মীরিদের ক্ষতি হবে। সুবিধা পাবে ভারত। মাওলানা ফজলুর রেহমানকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। মাওলানা ফজলের সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে পাকিস্তানের বিরোধীদলগুলোও। এরমধ্যে রয়েছে বড় দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ। দলগুলো আগামি সপ্তাহে আলাদা আলাদা সরকার বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।
নিষিদ্ধ হয়েছে অঙ্গসংগঠন আনসারুল ইসলাম
এদিকে জমিয়াত উলেমা ই ইসলামের অঙ্গসংগঠন আনসারুল ইসলামকে নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তান সরকার। একইসঙ্গে প্রাদেশিক সরকারগুলোকে ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেয়। কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ইসলামপন্থি ওই সংগঠনটি সশস্ত্র দলে পরিণত হচ্ছে। আজাদি মার্চ উপলক্ষে যখন মাওলানা ফজলের অনুসারীরা ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনই এই নিষিদ্ধের ঘোষণা এলো। এতে বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছে জমিয়াত উলেমা ই ইসলাম।
প্রস্তুতি নিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো
আজাদি মার্চকে সামনে রেখে বড় ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। প্রস্তুত করা হচ্ছে দাঙ্গা পুলিশ। দফায় দফায় চালানো হচ্ছে মহরা। রাওয়ালপিন্ডিতে দাঙ্গা পুলিশ জল-কামান, লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদেরকে বিভিন্ন কৌশলগত দিকের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। বিশেষ বাহিনীর অতিরিক্ত তিন হাজার পুলিশকে নিয়ে আসা হয়েছে রাজধানীতে। এ নিয়ে সিপিও রানা বলেন, কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেয়া হবে না। এ জন্য প্রস্তুত রয়েছি আমরা।
স্তুতির মধ্যে রয়েছে পাথর নিক্ষেপের মধ্যে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। অভিজ্ঞরা নতুন পুলিশ সদস্যদের নানা নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন মাস্ক ও রাবার বুলেট। টিয়ার গ্যাস হামলার সময় কীভাবে এসব ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে বারবার মহরা করা হয়। ৩১ অক্টোবর দাঙ্গা পুলিশ বর্ম, টিয়ার গ্যাস গান, শেল, আরমর, বুলেট প্রুফ হেলমেট ও লাঠি হাতে অবস্থান নেবে ইসলামাবাদে।
অভিযোগ অস্বীকার ইমরান খানের
তবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সমালোচকদের এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। একইসঙ্গে দাবি করেছেন, তিনি মোটেও সামরিক বাহিনী সমর্থিত নন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে। এর আগে ডন জানিয়েছিলো, ইমরান খান আক্ষেপ করে বলেছেন যে, মাওলানা সাহেব কোমল মাদ্রাশা শিক্ষার্থীদের দিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এছাড়া নির্বাচন কর্তৃপক্ষও ২০১৮ সালের ভোটে ইমরান খানের পক্ষে কারচুপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
উল্লেখ্য, বয়স্ক রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজল জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক পরিষদের বেশ কয়েকটি আসনে জোটের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে দেশজুরে গড়ে ওঠা অসংখ্য মাদ্রাসাগুলোই তার সমর্থনের প্রধান উৎস। মাদ্রাসাভিত্তিক এই আন্দোলনকে নিয়েই তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় ধরণের প্রভাব বিস্তার করছেন।