নাগরিক সময় : রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ থেকে ওমর ফারুক চৌধুরীকে অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির ৪১ নেতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে লিখিতভাবে ১৪টি অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে আলোচনা করতে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের ৮ নভেম্বর ঢাকায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলীয় সূত্র জানায়, ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে পাঠানো অভিযোগনামায় জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানসহ সব উপদেষ্টা, সব সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক ও দফতর সম্পাদক স্বাক্ষর করেছেন। এতে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটির শীর্ষ নেতা স্বাক্ষর করেন। এছাড়া অভিযোগনামায় রাজশাহীর কয়েকজন দলীয় সংসদ সদস্যও স্বাক্ষর করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়- ছাত্রদলের পর ফ্রিডম পার্টি হয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে আসেন ফারুক চৌধুরী। তিনবার আওয়ামী লীগের টিকিটে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে দলীয় চেতনাবিরোধী হিসেবেই তিনি রাজশাহীতে পরিচিতি পেয়েছেন। জেলা কমিটির সভাপতি হওয়ার পরও ফারুক চৌধুরী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, জেল হত্যা দিবস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ জাতীয় ও দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন না। এমনকি ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আহ্বানের বিষয়েও তিনি অনুমতি দেননি। ফলে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিজ নিজ দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রচার কাজ চালাতে বাধ্য হন। নিজ দায়িত্বে জনসভায় তারা অংশ নেন। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা সভাপতির ওপর ক্ষুব্ধ হন। ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী গোদাগাড়ীতে বিএনপির উপজেলা সভাপতি ইসাহাক আলীকে আওয়ামী লীগে যোগদান করান ও অনুষ্ঠানে মিষ্টি বিতরণ করেন। জেলা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বদিউজ্জামানকে বহিষ্কার ও তানোর উপজেলা কমিটির সভাপতি গোলাম রাব্বানীকে উপজেলা সাংগঠনিক সভায় অংশগ্রহণে তিনি বাধা দেন।
ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা আরও অভিযোগ হল- দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সরিয়ে কয়েক বছর ধরে তিনি বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের দলে ভিড়িয়ে তাদের শীর্ষ পদে বসাচ্ছেন। এতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলবিমুখ হয়ে পড়ছেন। এসব কারণে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতির দাবি জানানো হয়েছে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে রাজশাহী আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ বিভক্তির পর থেকে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন সভাপতি ওমর ফারুক। কোনো জাতীয় ও দলীয় কর্মসূচিতেও তিনি অংশ নেন না।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, কমিটির কতিপয় নেতা তার সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ কেন্দ্রে করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সাংগঠনিক পরিবেশ না থাকায় দলীয় কার্যালয়ে তিনি যেতে পারেননি। তবে নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি সব দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচি পালন করে আসছেন। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সভাপতি ওমর ফারুক দলীয় চেতনা বিরোধী লোক। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের বিরাজমান কোন্দল নিরসনের জন্য নির্বাহী কমিটির সব সদস্যকে ৮ নভেম্বর ঢাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।