নাগরিক ডেস্ক: পারমানবিক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প’র কাজ। তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর কমপার্টমেন্টের অভন্তরীণ কনটেইনমেন্টের (প্রতিরোধক) প্রথম পর্যায়ের কংক্রিট ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।
রূপপুর প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী এবং এটমস্ত্রয় এক্সপোর্টের বাংলাদেশ শাখার উপপরিচালক (প্রকল্প ব্যবস্থাপনা) ইউরি কোশেলেভ এটিকে একটি মাইলফলক কাজ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, উক্ত কাজে ১ হাজার ১৪৫ ঘনমিটার উচ্চমানের আরসিসি ব্যবহৃত হয়েছে এবং রিয়্যাক্টর বিল্ডিংয়ের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ৬ মিটারের বেশি।
তিনি আরও জানান, প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর কমপার্টমেন্টে মূল যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ ২০২০ সালে শুরু হবে।
জানা গেছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিটের নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি অত্যাবশ্যক অংশ হচ্ছে এই অভ্যন্তরীণ কনটেইনমেন্ট, যা যে কোনও জরুরি অবস্থায় তেজস্ক্রিয় পদার্থের নির্গমন রোধ করে। অভ্যন্তরীণ কনটেইনমেন্ট একটি সিলিন্ডার আকৃতির আরসিসি কাঠামো যার উপরিভাগে থাকে অর্ধ-গোলাকার গম্বুজ (ডোম)। কনটেইনমেন্টের কাঠামোটির দেয়াল ১.২ মিটার পুরু এবং উচ্চতায় প্রায় ৭৩মিটার। অভ্যন্তরীণ কনটেইনমেন্টকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখে আরও একটি অত্যন্ত সদৃঢ় কাঠামো, যা বাহ্যিক কনটেইনমেন্ট হিসেবে পরিচিত।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ২টি ইউনিট স্থাপিত হচ্ছে। প্রতিটিতে থাকবে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটির জেনারেল কন্ট্র্যাক্টর রুশ রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের প্রকৌশল শাখা এটমস্ত্রয় এক্সপোর্ট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮০ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। দুই ইউনিটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর সমকালকে জানান, এই প্রকল্পের ‘লাইফ’ বা জীবন শক্তি হবে ৫০ বছর। আর তা সংস্কার করে দাঁড়াবে ৮০ বছরে। পাঁচস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনি থাকায় এই প্রকল্পে দুর্ঘটনা ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই। যদি কোন অনাকাঙ্খিত র্দুঘটনা ঘটেও তাতে কোন ক্ষতি হবে না। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি মোকাবালোয় এই রি-অ্যাকটর সক্ষম। জাপানের ফুকুসিমা দুঘর্টনার কথা মাথায় রেখে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্লানটি বিদ্যুৎ সরবরাহবিহীন নিরাপদে থাকবে। পৃথিবীর ৩২ দেশের পারমানবিক বিদ্যুৎ চুল্লির মধ্যে এটি হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এবং ফোর জি ক্ষমতা সম্পন্ন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে ১৯৬০ সালে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য ১৯৬০, ১৯৭৭-৭৮ এবং ১৯৮৮-৮৯ সালে কারিগরি ও অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে এটি নির্মাণ সম্ভব হয়নি। সরকারের বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের ১০ শতাংশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ থেকে পাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং গাইডলাইন অনুযায়ী পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।