নাগরিক প্রতিবেদক: রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়ার সাথে জড়িত ১৬ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যব¯’া গ্রহণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে কারিগরী শিক্ষা বোর্ড। অধ্যক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত ৪ শিক্ষার্থীকে ¯’ায়ী বহিষ্কার, ৫ শিক্ষার্থীর মূল সদনপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা এবং ৭ শিক্ষার্থীকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিয়ে অন্য কোনো ইন্সটিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষ জানান, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাউন্সিলের সুপারিশে জড়িত ৪ শিক্ষার্থীকে ¯’ায়ী বহিষ্কার, ৫ শিক্ষার্থীর মূল সদনপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা ও ৭ শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে অন্য কোনো ইন্সটিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তদন্ত কমিটির এই সুপারিশ গত মাসে বাংলাদেশ কারিগরী বোর্ডে পাঠানো পাশাপাশি শাস্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারের উ”চ পর্যায়ে রেজুলেশন আকারে চিঠি পাঠানো হয়। কারিগরী বোর্ড গত ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিউটির তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে। গত বৃহস্পতিবার থেকে অভিযুক্তদের শাস্তি কার্যকর হয়েছে। তবে চলমান পরীক্ষা শেষে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সাতজনকে অন্যত্র বদলি করা হবে বলে তিনি জানান।
ছাত্রত্ব বাতিল বা রেজিস্ট্রেশন বাতিলের আওতায় রয়েছে, ঘটনার মূল হোতা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২০১৫-১৬ সেশনের কম্পিউটার বিভাগের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন সৌরভ, একই সেশনের ইলেকট্রো-মেডিকেল বিভাগের ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের পঞ্চম পর্বের ছাত্র মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-১৯ সেশনের মেকানিক্যাল বিভাগের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।
মূল সনদপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র আগামী তিন বছরের জন্য আটকে রাখা পাঁচ শিক্ষার্থীরা হলেন, ২০১৫-১৬ সেশনের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো-মেডিকেল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারফ হোসেন।
এ ছাড়া অন্যত্র বদলিকৃত সাত শিক্ষার্থীরা হলেন, ২০১৫-১৬ সেশনের পাওয়ার বিভাগের ষষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলাম, ২০১৬-১৭ সেশনের ইলেকট্রনিক্স সপ্তম পর্বের প্লাবন কুমার কুন্ডু, মেকাট্রনিক্স সপ্তম পর্বের মেহেদী মাহমুদ, মেকানিক্যাল বিভাগের সপ্তম পর্বের মেহেদি হাসান, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের পঞ্চম পর্বের ওমর আজিজ, ২০১৮-১৯ সেশনের তৃতীয় পর্বের কম্পিউটার বিভাগের মাহবুবুর রহমান ও পাওয়ার তৃতীয় পর্বের মাসুদ রানা মীম।
উল্লেখ্য, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মিডটার্মে অকৃতকার্য ও ক্লাসে অনুপ¯ি’ত থাকা দুই শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনের ওপর চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর অধ্যক্ষের সাথে তারা অশারীন আচারণ করে। পরে এর জেরে ওই দিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে টেনে-হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগের ১৬ নেতা কর্মী। এ নিয়ে মামলা করেন অধ্যক্ষ। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়।
এ ঘটনায় ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনসহ মামলার মূল হোতাসহ এ পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।