নাগরিক ডেস্ক:
ভারতের রাজধানী দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকার মসজিদে আয়োজিত তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গত দুইদিনে ৬৪৭ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব লাভ আগারওয়াল বলেন, ‘তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গত দুইদিনে ৬৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা যদি গত কয়েকদিনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি দেখি, তাহলে প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, তা নির্দিষ্ট একটি স্তরে বৃদ্ধির কারণে ঘটেছে।’
দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও জানান, ‘দিল্লির ওই তাবলিগ জামাত থেকে দেশের ১৪টি রাজ্যে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া ওই তাবলিগ জামাতের সঙ্গে যুক্ত অন্তত ১২ জন ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’
গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে মার্কাজ নিজামুদ্দিনের ওই তাবলিগ জামাতে ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে কয়েক শত মুসল্লি অংশ নেন। ছিলেন বাংলাদেশের মুসল্লিও। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন ওই সমাবেশে। ভারতের অনেক রাজ্য সরকার ওই সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।
ভারতের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাডুতে। যারা ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে ২৬০ জন রাজ্যটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া দিল্লির ২৫৯ জন করোনা আক্রান্তও ওই তাবলিগ জামাতে যোগ দিয়েছিলেন।
শুক্রবার উত্তরপ্রদেশে ১৭২ জনের দেহে নতুন করে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪২ জনই দিল্লির ওই তাবলিগ জামাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এদিকে অন্ধ্রপ্রদেশের ১৪০ জন আক্রান্তের মধ্যে ১০৮ জনই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। রাজস্থানে সংখ্যাটা ২৩ জন।
এদিকে গত ১৮ মার্চ তেলেঙ্গানায় এক ইন্দোনেশিয়ান ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তিনিও ওই সমাবেশে গিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পর একটি চিঠিতে ওই দলের সদস্যদের বিস্তারিত বিবরণ রাজ্যগুলোর কাছে পাঠিয়ে তাদের খুজে বের করে করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
এছাড়া কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও দিল্লির ওই তাবিলগ জামাতে অংশ নেয়া কিংবা তাদের সংস্পর্শে আসা মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে। কাশ্মীরে প্রথম যে মৌলানা করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনিও ওই তাবলিগ জামাতের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন।
নাগরিক ডেস্ক: দিল্লিতে স্কুল, কলেজ ও সিনেমা হল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এগুলো বন্ধ থাকবে। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে প্রাথমিক স্কুলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি সরকার। এবার সব স্কুল, কলেজ ও সিনেমা হল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। দিল্লির স্কুলগুলোতে চলা পরীক্ষাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনেই দেশটির দক্ষিণের রাজ্য কেরালার। দিল্লি ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভিড় এড়াতে বন্ধ রাখা হয়েছে সিনেমা হলগুলো।
নাগরিক ডেস্ক: বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন ঘিরে রাজধানী দিল্লিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডবে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়েছে ভারতের সংসদেও। বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে রাজ্যসভা মুলতবি করা হয়েছে। লোকসভার অধিবেশনও মুলতবি হয়েছে দফায় দফায়।এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, দিল্লির সহিংসতা নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে দুই কক্ষেই সোচ্চার ছিল কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, বিএসপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল।
তুমুল প্রতিবাদের মুখে পড়ে ‘পরে আলোচনা’র কৌশল নিয়েছে শাসক দল। বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে রাজ্যসভা মুলতবি করা হয়েছে। লোকসভার অধিবেশনও মুলতবি হয়েছে দফায় দফায়। জানা গেছে, অধিবেশন ফের শুরু হলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিবৃতি দিতে পারেন।
লোকসভার বাইরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে চোখে কালো কাপড় বেঁধে ‘গান্ধীজির তিন বাঁদর’-এর অনুকরণে প্রতিবাদ করেন তৃণমূল সংসদ সদস্যরা। সেই বিক্ষোভে কংগ্রেস এমপিদেরও যোগ দিতে দেখা গিয়েছে।দিল্লির সহিংস ঘটনার পর সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব। অধিবেশন শুরুর দিনই বড়সড় ধাক্কা খায় শাসক দল বিজেপি।
দিল্লির সহিংসতা নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে এ দিন সংসদের উভয় কক্ষেই আলোচনার প্রস্তাব দেয় বিরোধীরা। কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা গোলাম নবি আজাদ প্রশ্ন তোলেন, দিল্লিতে যখন সংঘর্ষ ছড়াচ্ছে, সরকার কি তখন ‘ঘুমোচ্ছিল’।দিল্লির সহিংসতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি তোলে কংগ্রেস।
এ দিন রাজ্যসভার চেয়েও বেশি বিশৃঙ্খলা হয়েছে লোকসভায়। অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করে তুমুল হট্টগোল শুরু করেন বিরোধীরা। কিন্তু রাজ্যসভার মতোই লোকসভাতেও স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়ে দেন, এটা আলোচনার উপযুক্ত সময় নয়।
তিনি বলেন, অবস্থার উন্নতির জন্য আমরা অপেক্ষা করব। তার পর আলোচনার অনুমোদন দেব। কংগ্রেসসহ তৃণমূল, আপ, এসপি, বিএসপি, ডিএমকেসহ প্রায় সব বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের হট্টগোলে দফায় দফায় মুলতবি হয়ে যায় অধিবেশন।
কংগ্রেস এমপি শশী থারুর, রাহুল গান্ধী ও অধীর চৌধুরীকে দেখা গিয়েছে প্রতিবাদস্থলে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে। সেই প্ল্যাকার্ডে দাবি উঠেছিল, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।তথ্য সূত্র : অনলাইন
নাগরিক ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন স্থানে সিএএর সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এখনও থামেনি। ফলে সেখানকার পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে। এর মধ্যেই দিল্লির একটি মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো ভারতে দু’দিনের সফর করেছেন। এই সফরে তিনি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ট্রাম্প দিল্লিতে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই দিল্লির বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা গেছে, একদল লোক একটি মসজিদের মিনারে উঠছে এবং সেখানে একটি পতাকা স্থাপনের চেষ্টা করছে। তারা মসজিদের মিনারে উঠে মাইক ভেঙে ফেলে দেয় এবং সেখানে হনুমানের ছবি সম্বলিত একটি পতাকা উত্তোলন করে।
কিছুক্ষণ পরেই আরও এক ব্যক্তি একটি ভারতীয় পতাকা নিয়ে আসে এবং সেটাও উত্তোলন করা হয়। ওই এলাকার দোকানগুলোতেও হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
রোববার উত্তর দিল্লির মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্তত তিনটি স্থানে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ, লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় দুই পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। টেলিভিশনে প্রচারিত কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সংঘর্ষস্থলের আশপাশের ভবনে আগুন জ্বলছে।
পুরো উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে আগামী এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। দিল্লি সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদেও ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। গাজিয়াবাদ-দিল্লিতে চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
নাগরিক সময় :
৪ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পে কমিশনকে আদালতে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, প্রশিক্ষিত স্নাতক শিক্ষক স্তরের যে সর্বভারতীয় বেতন কাঠামো রাজ্যে চালু করার কাজ কতদূর এগিয়েছে। সেই হলফনামার ভিত্তিতে ১০ জানুয়ারি শুনানি। দীর্ঘদিনের বকেয়া বেতনের দাবির মীমাংসায় এখনও আদালতের দিকেই তাকিয়ে আছেন রাজ্যের স্নাতক শিক্ষকেরা। কিন্তু এর আগে দু’বার আদালতের নির্দেশ শিক্ষকদের পক্ষে যাওয়া সত্বেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি রাজ্য সরকার। যে কারণে তারা এবার বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছেন।
প্রাথমিকভাবে বিক্ষোভের কথা ভেবেছেন তারা। তাতেও সরকারের নজর কাড়তে না পারলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ক্লাস নেওয়া বন্ধ করার মতো চরম পদক্ষেপ করতে পারেন তারা। যা নিঃসন্দেহে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বড় প্রভাব ফেলবে। খবর: ডয়চে ভেলেন।
বৃহত্তর গ্র্যাজুয়েট টিচারস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সহ সভাপতি সতীশচন্দ্র মাহাতো সংগঠনের পক্ষ থেকে ডয়চে ভেলে–কে জানালেন, আজ বলে নয়, গত ২০ বছর ধরে স্নাতক শিক্ষকদের প্রতি এই অন্যায় হয়ে আসছে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে অতীতের বামফ্রন্ট, বা আজকের তৃণমূল সরকার, কেউই শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান এবং সাম্মানিক দেওয়ার দায়িত্ব নেয়নি। অথচ নীতিগতভাবে শিক্ষকদের দাবি যে ন্যায্য, সেটা সরকার মেনে নিয়েছে।
পে কমিশনের সামনে শুনানিতেও সংগঠনের বক্তব্য মানতে বাধ্য হয়েছেন আধিকারিকরা। কিন্তু প্রতিবিধানের আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। ফলে একরকম বাধ্য হয়েই এবার আন্দোলনের দিকে হাঁটছেন স্নাতক শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্বশিক্ষকদের অনশন বিক্ষোভও চাপে রেখেছিল রাজ্য সরকারকে। সিঙ্গুর জমিরক্ষা আন্দোলনের সময় তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা ব্যানার্জির টানা ২৬ দিনের অনশনের ‘রেকর্ড’ ভেঙে দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক–শিক্ষিকাদের ২৮ দিনের অনশন। তার শাস্তিও পেতে শুরু করেছেন তারা। কাজ ফেলে ধরনা দেওয়ার ‘অপরাধে’ ওদের প্রত্যেকের বেতন কাটা শুরু হয়েছে। এই মাসে দুশো টাকা, তিনশো টাকা করে বেতন পেয়েছেন তারা।
সূত্র/ ইত্তেফাক
নাগরিক ডেস্ক:
ভারতের অর্থনীতির দুরবস্থার আশঙ্কাই অবশেষে সত্যি হলো। দেশটির আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার আরও কমেছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে জিডিপি বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৪.৫ শতাংশে। শনিবার দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু অক্টোবরে ভারতের আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উৎপাদন সরাসরি ৫.৮ শতাংশ কমেছে।
অন্যদিকে, অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসেই রাজকোষ ঘাটতি ৭.২ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা গোটা বছরের আনুমানিক রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণের থেকে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় দেশের আর্থিক বৃদ্ধির গড় হার ৩.৫ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছিল। তাকে ব্যঙ্গ করে ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথ’ তকমা দেন অর্থনীতিবিদ রাজ কৃষ্ণ। সেই তকমা জনপ্রিয় হয়েছিল।
মোদি সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর জুলাইয়ে সংসদে আর্থিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে নতুন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পাল্টা বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস আমলে অর্থনীতি কেন দ্বিগুণ হয়নি? তখন কেন হিন্দু রেট অব গ্রোথ চাপানো হয়েছিল!’ এ বার মোদির আমলেই প্রবৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশে নেমে আসায় প্রশ্ন উঠছে, ‘হিন্দু রেট’-এই কি ভারত ফিরে যাচ্ছে?
জেএনইউ-এর অর্থনীতির অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষের বলেছেন, ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথে তো তা-ও ৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধির হার ছিল। এখন কি বৃদ্ধি আদৌ হচ্ছে? না কি অর্থনীতির সংকোচন হচ্ছে? বেকারত্বের হার, সংসারের খরচ কমে যাওয়া, গাড়ি থেকে নিত্য প্রয়োজনের জিনিসপত্রের বিক্রি কমা, একের পর এক সংস্থার ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার মতো অর্থনীতির অন্যান্য মাপকাঠি কিন্তু সে কথাই বলছে।’’
আনন্দবাজার জানায়, ভারতের অর্থনীতির এই হালের কারণ হলো বাজারে বিক্রিবাটা কমেছে। কারখানার উৎপাদনে নিন্মমুখী। বেসরকারি লগ্নি আসছে না। বিশ্ব বাজারে ঝিমুনির ফলে রফতানিতেও ভাটার টান। অর্থনীতির চারটি ইঞ্জিনই ঠিক মতো না চলায় তার ধাক্কা লেগেছে অর্থনীতিতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ অর্থনীতির অবস্থাকে ‘গভীর ভাবে চিন্তাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মোদি সরকার ক্ষমতায় ফিরে ৫ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু গত ছ’বছরে অর্থনীতির অবস্থা এতখানি খারাপ হয়নি।
২০১২-১৩-র জানুয়ারি-মার্চে বৃদ্ধির হার ৪.৩ শতাংশে নেমে এসেছিল। সেই অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার মাত্র ৪.৫ শতাংশ ছিল। চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস, এপ্রিল থেকে জুনে বৃদ্ধির হার ছিল ৫ শতাংশ। পরের তিন মাসে তা ৪.৫ শতাংশে নেমে আসায় এই অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের গণ্ডি টপকাতে পারবে কি না, তা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে বৃদ্ধির হার মাত্র ৪.৮ শতাংশ। যা গত বছরে ছিল ৭.৫ শতাংশ।
তবে মোদি সরকারের অর্থনৈতিকবিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তীর দাবি, ‘আইএমএফ-ই বলেছে, এ বছর বৃদ্ধির হার ৬.১ শতাংশে পৌঁছবে। আগামী অর্থ বছরে ৭ শতাংশ হবে। শেয়ার বাজারে লগ্নির আগমনও ইতিবাচক।’
মুখ্য অর্থনৈতক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, ‘অর্থনীতির ভিত মজবুতই রয়েছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিক থেকেই বৃদ্ধির হার বাড়তে শুরু করবে।’
নাগরিক ডেস্ক: ‘বিদেশি’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আটক-শিবিরে বন্দী আসামের এক প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিবার বলছে, তারা মৃতদেহ নিতে চান না।”বাবাকে যখন বিদেশি বলেই ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশেই পাঠিয়ে দিক দেহ, আমরা নেব না,” বলছিলেন দু’বছর আটক থেকে মারা যাওয়া দুলাল পালের ছেলে আশিস।
প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে মৃত ব্যক্তিকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বিদেশি বলে ঘোষণা করার পরেই তাকে আটক করে তেজপুর জেলের ভেতরে যে আটক-শিবির রয়েছে, সেখানে রাখা হয়েছিল।
শোনিতপুরের ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং বিবিসিকে জানিয়েছেন, “মাস-খানেক আগে মি. পাল আটক-শিবিরে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার মানসিক ব্যাধি ছিলই, এর সঙ্গে যোগ হয় ডায়াবেটিসও। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে তার চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই তিনি গত রবিবার মারা যান।”
শোনিতপুর জেলার আলিসিঙ্গা-রবারতলার বাসিন্দা দুলাল পাল যে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন, সেটা জানিয়েছে তার পরিবারও। সেই অবস্থাতেই তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে।
ছবি ও তথ্য :
১৭ অক্টোবর ২০১৯।“১৯৬৫ সালে জমি কেনার দলিল রয়েছে আমদের। সেটাই তো প্রমাণ যে আমার বাবা ৭১-এর আগে এসেছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সেটা মানল না। বাবা বা আমাদের ভাইদের কারও নামই এনআরসিতে ওঠে নি,” বলছিলেন আশিস পাল।
মি. পালের মা ঘরেই মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেন, আর তিনি নিজে গ্যারেজে কাজ করেন।
জমি আর মায়ের সামান্য সোনার গয়না বিক্রি করে বাবাকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করার জন্য মামলা লড়তে হয়েছে তাদের। কোনদিনই তিন-বেলা ভরপেট খেতে পারেন না তারা।
“কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে আমাদের। এত কিছু করেও বাবাকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে পারি নি।”
জীবিত অবস্থায় যখন তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে আমরা কেন দেহ নেব? আগে লিখিতভাবে প্রশাসন জানাক যে আমার বাবা ভারতীয় ছিলেন, তবেই দেহ নেব,” ক্ষোভ আশিস পালের।
এ নিয়ে প্রশাসন পড়েছে এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে।
ডেপুটি কমিশনার মি. সিং বলছিলেন, “তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেছিল ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। যে কোনও কারণেই হোক তিনি একবারও ভোট দেন নি। সে জন্যই তার নাম প্রথমে ‘ডি-ভোটার’ করা হয়েছিল, তারপরে ট্রাইব্যুনালেও তিনি প্রমাণ দিতে পারেন নি যে তিনি বিদেশি নন। সেক্ষেত্রে আমাদের তো করার কিছু নেই। আমরা তো ট্রাইব্যুনালের আদেশ বদলাতে পারি না।”
গত তিন দিন ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা আশিস পাল আর তার পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আইনি সহায়তা, মরদেহ গুয়াহাটি থেকে শোনিতপুরে নিয়ে আসার ব্যবস্থাসহ নানা সাহায্য করতেও তারা প্রস্তুত বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
একই সঙ্গে কীভাবে আটক অবস্থাতেই মৃত্যু হল দুলাল পালের, তা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ জারি করেছেন শোনিতপুরের ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং।
এখনও দুলাল পালের মৃতদেহ গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের মর্গেই রাখা রয়েছে। আর ওদিকে তার বাড়িতে পরিবার পরিজন হিন্দু শাস্ত্র মতে অশৌচও পালন করতে পারছেন না দেহ সৎকার না হওয়ায়।
তার ছেলে বলছিলেন, “বাবাকে দাহ করা হয় নি, তাই আমরা শুধু ফলটল খেয়ে আছি।”
নাগরিক ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের গরিব মৃৎশিল্পী অসীম পালের আটটি কালীপ্রতিমা বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে মুসলিম প্রতিবেশী ফরজ শেখ নিজের নামাজের ঘরের একাংশ ছেড়ে দিয়েছেন। খবর ভারতের গণমাধ্যম দ্য ওয়ালের।কাটোয়া এক ব্লকের খাজুরডিহি গ্রামের বাসিন্দা অসীম পাল। ছবি ও তথ্য সূত্র আরটিভি অনলাইন।
প্রতিমা তৈরি করে কোনোমতে সংসার চালান তিনি। এবার এলাকার আটটি কালীপ্রতিমা তৈরির কাজ পান তিনি। নিজের থাকার ঘরে কোনোমতে একটা প্রতিমা রাখতে পেরেছিলেন তিনি।এই গরিব মৃৎশিল্পী উঠানে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে অন্য প্রতিমাগুলো তৈরি করছিলেন। বুধবার থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হলে ছাউনি ভেদ করে পানি ঢুকতে শুরু করে। ধুয়ে যেতে থাকে প্রতিমাগুলোর রঙ। এমনকি গলতে শুরু করে মাটি। কিভাবে রক্ষা করবেন প্রতিমাগুলো ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি।অসীম পালের এই দুর্দশা দেখে এগিয়ে আসেন মুসলিম প্রতিবেশী ফরজ শেখের স্ত্রী আফরোজা। তারা দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিমাগুলো তাদের একটি ঘরে নিয়ে যান। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যেতে পারেনি ফরজ শেখ। যে ঘরে প্রতিমাগুলো রাখা হয়, সেই ঘরেই নামাজ আদায় করেন তিনি।ফরজ শেখ এই বিষয়ে বলেন, আমার প্রতিবেশী প্রতিমা তৈরি করেই সংসার চালান। এমন বৃষ্টিতে তিনি বিপদে পড়ে যান। তাই আমার ঘর ছেড়ে দিয়েছি। কেউ বিপদে পড়লে কি তার ধর্ম বিচার করলে চলে? সবার ওপরে মানুষ সত্য।তার এই মানসিকতায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন অসীম পাল। তিনি বলেন, আমার বাড়িতে জায়গা ছিল বলে উঠানে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করছিলাম। কিন্তু যেভাবে বৃষ্টি নামে তাতে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে পারতাম না। ফরজ শেখ এগিয়ে এলেন বলেই পারলাম।এদিকে ফরজ শেখের বাড়িতে প্রতিমা তৈরি হওয়ায় খুব খুশি তার চার বছর বয়সী মেয়ে ফারহা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে তার এখন একটাই কাজ। আর সেটি হলো, পা ঝুলিয়ে বসে খুব কাছ থেকে প্রতিমা তৈরি করা দেখা।